Monthly Archives: March 2015

বিচিত্র এই কাণ্ডকারখানা!

Standard
গতকালের ঘটনা, এবং বলাই বাহুল্য, নিয্যেস সত্যি ঘটনা।

একটা দীর্ঘ, বোরিং, ইম্পরট্যান্ট এবং ঘুমপাড়ানি মিটিঙের পর একরাশ কাগজ বগলদাবা করে মিটিং ঘর থেকে বেরিয়ে সিগারেট খাবার জন্যে হাঁকপাঁক করছিলাম।

কিন্তু বাধ সাধছিল হাতের কাগজের বান্ডিল। তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে পাকড়াও করলাম আমাদের একজন লিফটচালককে, যাঁর নাম আসিফ খান। বজবজবাসী খানসায়েবকে ধরে অনুরোধ করলাম তিনি যদি কাগজগুলো দোতলায় (আমি যেখানে বসি) পৌঁছে দেন, এবং আমার নাম করে বলেন আমার ঘরে কাগজগুলো রেখে দেবার কথা।

খানসায়েব অত্যন্ত সজ্জন এবং ভদ্র মানুষ। তৎক্ষণাৎ রাজী হলেন এবং কাগজ আমার হাত থেকে নিয়ে নিজের উড়নখাটোলায় চেপে গন্তব্যের দিকে পাড়ি দিলেন।

সিগারেট সেবন করে ফেরার পথে দেখা। জিগ্যেস করলাম কাগজগুলো দিয়েছেন কি না, এবং কার হাতে দিয়েছেন। তিনি জানালেন, দিয়েছেন এবং ‘ওই মুসলমান ছেলেটা আছে না, ওকে’! বুঝলাম মুজিবের হাতে কাগজ পৌঁছেছে, এবং জেনে নিশ্চিন্তও হলাম, কারণ মুজিব অত্যন্ত এফিসিএন্ট ছেলে।

পরক্ষণেই চেপে ধরলাম খানকে। ‘মুসলমান ছেলে বললেন কেন? আপনিও তো মুসলমান’! উত্তরে লাজুক হেসে বললেন, ‘ওই আমরা ওদের মুসলমান বলেই বলি সার’।

মুজিব বিহারের মুসলমান। আর আসিফ খান বাঙ্গালী। কারণ সম্ভবতঃ সেটাই!

বিচিত্র এই কাণ্ডকারখানা!

অজ্জিনাল ডায়লগ!

Standard

– আচ্ছা তুই সিগার রাকিস না?

– না! সিগার কি?

– সিগার… ওই যে… মোটা মোটা… আরে সোত্তোজিত রায়ের সিনেমায় থাকতো… কি দাদা, থাকতো না?
প্রশ্নের মুখ আমার দিকে ঘুরতেই ঘাবড়ে গেলাম। কিনতে গেছি চার্মস। এসব আলোচনায় ভাগ নেওয়ার মানসিক প্রস্তুতি একেবারেই ছিল না আর কি! তবু কিছু না বললে অসভ্যতা হয় এই ভেবে বলে ফেললাম – থাকতো! নিশ্চয়ই থাকতো!

– হ্যাঁ, ওই যে সোনার কেল্লা, দেকিস নি? কামু মুকাজ্জি খাচ্চিলো! বুজলি! ওই সোইলেন দাসগুপতো… (মিনমিন করে মুখার্জী বলতে গিয়ে চেপে গেলাম) ওই যে ডাক্তার হাজরা… সুটিং যাওয়ার সোময় বাড়িতে বলে গেচিল… তিনদিনের মোদ্দে না ফিল্লে পুলিসে খবর দিও! বলচে সোত্তোজিত রায়ের তো সব অজ্জিনাল ব্যাপার… তা কামু মুকাজ্জি ধাক্কা মেরে দিয়েচে… নীচে মোসারি টোসারি জাল টাল ছিল… কিন্তু তাও ওই রিক্স একটা আচে না! কি রে ভাই, আচে না!

(পান সিগারেট বিক্রেতা পলাশ এতোক্ষণ হুঁ-হাঁতে কাজ সারছিল। তবে ধাক্কা দেওয়ার ব্যাপার শুনে একটু বিচলিত হয়ে জানতে চাইল সত্যিই অভিনেতার কোনো ক্ষতি হয়েছিল কি না)

– না কিচু হয়নি মোনোঅয়… কিচু হলে তো বাওয়াল হয়ে যাবে তাই না? আর ওসব সেটে সুটিঙের সোমায় অনেক সিকুরিটি থাকে! তবে এই হল সোত্তোজিত রায় বুজলি! সব অজ্জিনাল!

বামপন্থী মৌলবাদ, বা মৌলবাদী বামপন্থা

Standard
আমার ফেসবুকীয় এক দোস্তের করা একটি পোস্ট এবং তার ওপর কিছু কমেন্ট দেখলে এ-রাজ্যের বাম আন্দোলনের হালহকীকতের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। মানে কিছুটা মুখের মধ্যে অখিলব্রহ্মাণ্ডরূপ গোছের একটা কেস হয় আর কি!

একটু খুলে বলি।

পোস্টকর্তা খুব স্পষ্টভাবেই বামপন্থী (বলে মনে হয়) কিন্তু (বা এবং, নিন্দুকে বলে ফলতঃ) সিপিএম বিদ্বেষী। তাঁর বক্তব্য – এই যে ব্রিগেডে এতো মানুষ জড়ো হলেন, মিটিংশেষে সিপিএমের নেতৃবৃন্দ তাঁদের কি কোনও দিশা দেখাতে পারলেন কি? না, এটা বক্তব্য নয় মোটেই। ঠারেঠোরে, কিন্তু অত্যন্ত মার্জিত ভাষায়, তাঁর মতো করে তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে এইসব জমায়েত জনতাকে বোকা বানানোর কল। “শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তি কী? একটা জোড়াতালি মারা রাজনৈতিক-রণকৌশলগত খসড়া” – এই হল তাঁর মত। মানে, খোঁচানোটা খুবই পরিষ্কার, কিন্তু অশালীন নয় মোটেই।

আমি তাঁর সঙ্গে একমত কি না, এটা এখানে বড়ো বিষয় নয় কিন্তু! একমত আমি হতেও পারি, না-ও হতে পারি। এবং দুইয়ের মধ্যে যেকোনো একটা অবস্থান বেছে নিলেও ওই পোস্ট–সংক্রান্ত বিতন্ডা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকবে।

এই পোস্টের উত্তরে কেউ কবিত্ব করে বললেন – প্রাপ্তি লাল পতাকা, প্রাপ্তি মানুষ (যাঁরা চাঁদের কপালে শত আহ্বানেও কিছুতেই ‘টি’ আর দিচ্ছেন না। এখানে প্রশ্ন উঠবে – ভোটটাই কি সব? আমার মনে হয় বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় এর উত্তর দিতে যাওয়াও বাতুলতা)। কেউ একেবারেই বিষয়ে না গিয়ে বাকচাতুরী দেখিয়ে হাসিমস্করা করে চলে গেলেন। কেউ বললেন – হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে! কেউ গাল দিলেন অতিবিপ্লবী বলে। কেউ মোক্ষম ঠাট্টায় নস্যাৎ করে দিলেন ‘কেন্দ্রগতং নির্বিশেষং চ’-দের (তিনি নিজে যে শুধুই ‘কেন্দ্রগতং নির্বিশেষং’ দলের মানুষ!) কারণ তারা নাকি নৈরাজ্যবাদী। যদিও জানিয়ে যেতে ভুললেন না বৃহত্তর বাম ঐক্যই হচ্ছে গিয়ে একেবারে মহাজনী মার্গের ব্যাপার! এই ঐক্যপূজারীর কথার সুর সারা বিশ্বের গণতন্ত্ররক্ষাকারীদের সঙ্গে অনেকটা মেলে, তাই না?
এক তরুণ তো বলেই বসলেন, সিপিএমের সভায় ভীড় তাই দাদার পিছন জ্বলছে!

কিন্তু ওঁর সঙ্গে সুস্থ বিতর্কে আগ্রহী, এমন কাউকেই দেখলাম না গোটা আলোচনায়।

যাঁরা নিজেদের বামপন্থী বলে দাবী করেন তাঁরা এতোটা অসহিষ্ণু কেন হবেন? তাও একজন বামপন্থীকে নিয়ে? তাঁরা কেন পারবেন না সভ্যভাবে তাঁদের কথা অবিশ্বাসীদের বোঝাতে? নিজেদের সবসময় (ভাবনার) গজদন্তমিনারে কেন বসিয়ে রাখবেন তাঁরা? কেন তাঁদের উচ্চারণে আসবে ‘মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা সত্য’ (পরের এডিশনে যা বিজ্ঞান বলে বলা হয়)- এ ধরণের গুরুবাদী নিদান? কেন তাঁরা হেয় করবেন আমার মতন সেইসব সাধারণ মানুষগুলোকে যারা ‘মন্ত্রতন্ত্র কিছুই’ জানে না? কেন তাঁরা নিজেদের মধ্যে লড়ে মরবেন? একদল আরেকদলকে বলবেন নৈরাজ্যবাদী, কেউ বলবেন স্তালিনিস্ট, কেউ খিস্তি দেবেন ট্রটস্কাইট বলে? এরপরে ভোটের মুখ চেয়ে বৃহত্তর ঐক্য চাইলে আর যা হোক বিশ্বাস করবে না একজনও!

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।

 এই লেখার শেষ অংশটা কেমন বাংলা ছবির চিত্রনাট্যের মতন হয়ে গেল! তবু আশা করছি, যা বলতে চাইলাম তার কিছুটা অন্ততঃ বোঝাতে পারলাম।