বামপন্থী মৌলবাদ, বা মৌলবাদী বামপন্থা

Standard
আমার ফেসবুকীয় এক দোস্তের করা একটি পোস্ট এবং তার ওপর কিছু কমেন্ট দেখলে এ-রাজ্যের বাম আন্দোলনের হালহকীকতের কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। মানে কিছুটা মুখের মধ্যে অখিলব্রহ্মাণ্ডরূপ গোছের একটা কেস হয় আর কি!

একটু খুলে বলি।

পোস্টকর্তা খুব স্পষ্টভাবেই বামপন্থী (বলে মনে হয়) কিন্তু (বা এবং, নিন্দুকে বলে ফলতঃ) সিপিএম বিদ্বেষী। তাঁর বক্তব্য – এই যে ব্রিগেডে এতো মানুষ জড়ো হলেন, মিটিংশেষে সিপিএমের নেতৃবৃন্দ তাঁদের কি কোনও দিশা দেখাতে পারলেন কি? না, এটা বক্তব্য নয় মোটেই। ঠারেঠোরে, কিন্তু অত্যন্ত মার্জিত ভাষায়, তাঁর মতো করে তিনি বলেছেন, আন্দোলনের নামে এইসব জমায়েত জনতাকে বোকা বানানোর কল। “শেষ পর্যন্ত প্রাপ্তি কী? একটা জোড়াতালি মারা রাজনৈতিক-রণকৌশলগত খসড়া” – এই হল তাঁর মত। মানে, খোঁচানোটা খুবই পরিষ্কার, কিন্তু অশালীন নয় মোটেই।

আমি তাঁর সঙ্গে একমত কি না, এটা এখানে বড়ো বিষয় নয় কিন্তু! একমত আমি হতেও পারি, না-ও হতে পারি। এবং দুইয়ের মধ্যে যেকোনো একটা অবস্থান বেছে নিলেও ওই পোস্ট–সংক্রান্ত বিতন্ডা সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি একই থাকবে।

এই পোস্টের উত্তরে কেউ কবিত্ব করে বললেন – প্রাপ্তি লাল পতাকা, প্রাপ্তি মানুষ (যাঁরা চাঁদের কপালে শত আহ্বানেও কিছুতেই ‘টি’ আর দিচ্ছেন না। এখানে প্রশ্ন উঠবে – ভোটটাই কি সব? আমার মনে হয় বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় এর উত্তর দিতে যাওয়াও বাতুলতা)। কেউ একেবারেই বিষয়ে না গিয়ে বাকচাতুরী দেখিয়ে হাসিমস্করা করে চলে গেলেন। কেউ বললেন – হেথা নয়, হেথা নয়, অন্য কোথা, অন্য কোনোখানে! কেউ গাল দিলেন অতিবিপ্লবী বলে। কেউ মোক্ষম ঠাট্টায় নস্যাৎ করে দিলেন ‘কেন্দ্রগতং নির্বিশেষং চ’-দের (তিনি নিজে যে শুধুই ‘কেন্দ্রগতং নির্বিশেষং’ দলের মানুষ!) কারণ তারা নাকি নৈরাজ্যবাদী। যদিও জানিয়ে যেতে ভুললেন না বৃহত্তর বাম ঐক্যই হচ্ছে গিয়ে একেবারে মহাজনী মার্গের ব্যাপার! এই ঐক্যপূজারীর কথার সুর সারা বিশ্বের গণতন্ত্ররক্ষাকারীদের সঙ্গে অনেকটা মেলে, তাই না?
এক তরুণ তো বলেই বসলেন, সিপিএমের সভায় ভীড় তাই দাদার পিছন জ্বলছে!

কিন্তু ওঁর সঙ্গে সুস্থ বিতর্কে আগ্রহী, এমন কাউকেই দেখলাম না গোটা আলোচনায়।

যাঁরা নিজেদের বামপন্থী বলে দাবী করেন তাঁরা এতোটা অসহিষ্ণু কেন হবেন? তাও একজন বামপন্থীকে নিয়ে? তাঁরা কেন পারবেন না সভ্যভাবে তাঁদের কথা অবিশ্বাসীদের বোঝাতে? নিজেদের সবসময় (ভাবনার) গজদন্তমিনারে কেন বসিয়ে রাখবেন তাঁরা? কেন তাঁদের উচ্চারণে আসবে ‘মার্ক্সবাদ সর্বশক্তিমান, কারণ ইহা সত্য’ (পরের এডিশনে যা বিজ্ঞান বলে বলা হয়)- এ ধরণের গুরুবাদী নিদান? কেন তাঁরা হেয় করবেন আমার মতন সেইসব সাধারণ মানুষগুলোকে যারা ‘মন্ত্রতন্ত্র কিছুই’ জানে না? কেন তাঁরা নিজেদের মধ্যে লড়ে মরবেন? একদল আরেকদলকে বলবেন নৈরাজ্যবাদী, কেউ বলবেন স্তালিনিস্ট, কেউ খিস্তি দেবেন ট্রটস্কাইট বলে? এরপরে ভোটের মুখ চেয়ে বৃহত্তর ঐক্য চাইলে আর যা হোক বিশ্বাস করবে না একজনও!

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার সময় এসেছে।

 এই লেখার শেষ অংশটা কেমন বাংলা ছবির চিত্রনাট্যের মতন হয়ে গেল! তবু আশা করছি, যা বলতে চাইলাম তার কিছুটা অন্ততঃ বোঝাতে পারলাম।

Leave a comment